টাঙ্গাইলে বাসাইলে জমি লিখে নেয়ার পর বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাড়িয়ে দেয় ছেলেরা!

টাঙ্গাইলে বাসাইলে জমি লিখে নেয়ার পর বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাড়িয়ে দেয় ছেলেরা!

মোঃ আল-আমিন শেখ টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:-জমি লিখে নেওয়ার পর অসহায় বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল দুই ছেলে। পরে নিরূপায় হয়ে তারা ঠাঁই নিয়েছিল খোলা আকাশের নিচে।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) গ্রামবাসী জোর করে বাবা-মাকে শেষপর্যন্ত ছোট ছেলের বাড়িতে তুলে দেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছোট ছেলের ঘরের একটি কক্ষে তাদের থাকতে দেয়া হয়েছে। তবে আশ্রয় মিললেও তাদেরকে মেরে ফেলতে পারেন তার ছেলে ও ছেলের বউরা এমন ভয়ে ভিত মা মেহেরুন বেগম।

গতকাল শনিবার (২১ নভেম্বর) টাঙ্গাইলে বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজির্ন অবস্থায় ছোট ছেলের ঘরের একটি কক্ষে মেঝেতে শুয়ে আছেন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া আব্দুল খালেক (৭০) এবং পাশে বসেই কাঁদছেন মেহেরুন বেগম (৬৫)।

মেহেরুণ বেগমের সাথে কথা বলতে গেলেই জোড়া হাতে অনুনয় বিনয় করে বলেন, কিছু কইয়া হারুমনা, আমগো মাইরা হালাইবো, বাবা তোমরা যাওগা।

এমনটা বলতেই ছোট ছেলে কাদেরের স্ত্রী ঐ কক্ষে ঢুকে প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি চান, ওনারা কি কইবো, যা কওয়ার তাতো কাইল সামবাদিকগো কইছেই, এহন আমার কতা হুনুন।

তিনি বলেন, শশুরের (আব্দুল খালেক) বাড়ি প্রথমে আমাগো গেদির বাবা ও তার চাচা (বাবুল) দুজনের নামে লিখে দেন।

আমার স্বামী তার অংশ বিক্রি করে বর্তমানে যে বাড়িতে আছি এখানে বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ বাড়ির যায়গা প্রতি শতাংশ দেড় লাখ টাকা করে স্থানীয় একজন কিনতে রাজি হয়। 

তখন আমার শাশুরী (মেহেরুন বেগম) আমার স্বামীকে বলেন, বাড়ির যায়গাটি তার বড় ছেলের কাছে বিক্রি করতে হবে। তারসাথে এবং আমার ভাসুর (বাবুল) এর সাথে মৌখিক চুক্তি হয়, যতদিন শশুর-শাশুরী জীবিত থাকবেন ততদিন ঐ বাড়িতে তারা বসবাস করবেন।

এ রকম চুক্তির পর প্রতি শতাংশে ৪০ হাজার টাকা কমে ভাসুরের নামে লিখে দেন আমার স্বামী। 


তবে এখন গ্রামের মানুষ জোর করে যে আমাদের বাড়িতে রেখে গেল। আমরাই খাবার দাবার দিতেছি। তবে শশুর শাশুরীতো আমার একার নয়, দুজনকে সমান খরচ বহন করার দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় হযরত আলী বলেন, খালেক ভাই ও ভাবিকে তাড়ানোর জন্য তাদের ঘরের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেন বড় ছেলে বাবুল।

তখন তারা গ্রামের বিভিন্ন লোকের কাছে বলেছেন যাতে তাদের লাইনটি জোড়া দিয়ে দেয়। কিন্তু কোন মতেই বাবুল বিদ্যুতের লাইন লাগাতে দেননি। খালেক ভাই চোখে দেখেনা।

বুইড়া মানুষ তিনি মনে করছেন, তিনি জীবিত থাকতেই এমন করে বড় ছেলে, মইরা গেলেতো তার স্ত্রীকে আরো কস্ট দিব, তাই খালেক ভাইর নামে থাকা ২৮ শতাংশ আবাদি জমি তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন।

এই লিখে দেওয়ার বিষয়টি বড় ছেলের কানে আসলে, বড় ছেলে বাবুল তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তারপর তারা আশ্রয় নেন খালেক ভাই এর স্ত্রী মেহেরুন ভাবীর বাবার বাড়িতে। সেখানে আড়াই মাস থাকার পর ৩/৪দিন আগে চলে আসেন তাদের ছোট ছেলের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

তার ছোট ছেলে অভিমানে তাদের বাড়িতে উঠতে দেয়না। পড়ে গ্রামবাসি এসে তাদের ঐ বাড়িতে থাকার ব্যাবস্থা করেন। বর্তমানে এখানেই আছেন। তবে মেহেরুন ভাবীর ভিতরে ভয় আছে ছেলেরা না কিছু করে বসে। কারণ জোর করেই ছোট ছেলের বাড়িতে তাদের রাখা হয়েছে। 


এদিকে বড় ছেলে বাবুলের সাথে কথা বলতে গেলে কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
 এ বিষয়ে বাসাইলের কাশিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা খান বাহাদূর জানান, আমি খবর পেয়ে, সাথে-সাথে গিয়ে ঐ বৃদ্ধ আর বৃদ্ধাকে তাদের ছোট ছেলের বাড়িতে তুলে দিয়ে আসছি। প্রতিবেশিদের খোঁজ খবর রাখতে বলছি। খুব শিগগিরই স্থায়ী সমাধান করার চেষ্টা চলছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন